পার্ট টাইম জব ২০২১: অনলাইন ও অফলাইন!
লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করে টাকা আয় করা ছাত্র জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পার্ট টাইম জব করে উপার্জিত আয়ের টাকা শুধু একজন ছাত্র এর পকেট মানির যোগান দেবে, এমনটা কিন্তু নয়। লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব এর মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারলে, আপনার সেই অভীজ্ঞতা পরবর্তীতে প্রফেশনাল লাইফে কর্মক্ষেত্রে আরো অধিক দক্ষতা ও অভীজ্ঞতা সম্পন্ন করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া লেখাপড়ার পাশাপাশি যেকোন উপায়ে টাকা আয় করতে পারলে আপনি নিজেকে একজন আত্মবিশ্বাসি মানুষ হিসেবে বন্ধুদের কাছে প্রকাশ করতে পারবেন।
সাধারণত ছাত্র জীবনে প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীর কিছু অভাব অনটন থাকে। কারণ লেখা পড়ার জন্য বাবা মা তার ছেলে মেয়দের খুব সীমিত টাকা হিসাব করে দিয়ে থাকেন। আপনি চেষ্টা করলেও সেই টাকা হিসাবের বাহিরে খরছ করতে পারেন না। কারণ মাস শেষ হওয়ার আগে টাকা ফুরিয়ে গেলে আপনি পুনরায় বাবা ময়ের কাছে টাকা চাইতে পারবেন না। নরমালি প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীকে লেখাপড়ার জীবনে বাবা মা যে টাকা দিয়ে থাকেন, সেই টাকার হিসাব বাবা মাকে পাই পাই করে দিতে হয়। লেখাপড়ায় ব্যয়িত টাকার সঠিক হিসাব দিতে না পারলে বাবা মায়ের বকুনি খেতে হয়।
আপনার বাবা মা আপনাকে বকুনি দেক কিংবা যেটাই করুক, সেটা আপনার ভালোর জন্য করেন। আপনি তখন প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়ার কারনে তখনো বাবা মায়ের উপদেশগুলো ভালোভাবে নিতে পারেন না। আপনি তাদের উপদেশগুলোকে ভালো দৃষ্টিতে না দেখে ভূলভাবে বিশ্লেষণ করেন। অথচ এই বকুনি আপনাকে পরবর্তী জীবনে সফলতার সিড়ে বেয়ে উপরে নিয়ে যায়, যেটি আপনি সাংসারিক জীবনে নিজে বাবা হওয়ার পর বুঝতে পারেন।
অনলাইনে আয় করার জন্য এগুলো পড়ুন -
তাছাড়া সন্তানের পড়াশোনার খরছ চালানো জন্য প্রত্যেক বাবা মায়ের কিছু রেসটিকশন থাকে। আপনার পড়া লেখার জন্য আপনাকে বেশি পরিমানে টাকা দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক অভাব অনটনের কারনে ইচ্ছা থাকা সত্বেও তারা আপনাকে বেশি টাকা দিতে পারেন না। প্রত্যেক মা বাবা তার সন্তানের খরছের জন্য পর্যাপ্ত টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু সাংসারিক ঝামেলা সামলাতে হিমশিম খেতে হয় বিধায় তারা সন্তানকে হিসাবের বাহিরে অতিরিক্ত টাকা দিতে সক্ষম হন না।
আপনি হয়ত বুঝতে পারেন না যে, আপনার বাবা মা আপনার পড়াশোনার খরছ যোগানোর জন্য কি পরিমানে কষ্ট করে যাচ্ছেন। আপনাকে লেখাপড়া করে মানুষ করার জন্য প্রতি মাসে ৫০০০ হাজার টাকা আলাদাভাবে দিতে গিয়ে আপনার বাবা মা-কে অনেক ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এমনকি অনেক বাবা মা আছেন যারা আপনার লেখাপড়ার খরছ যোগাতে গিয়ে তাদের স্বাদ আলহাদের কথা ভূলে যান।
আমি পেশায় বাংলাদেশ পুলিশের খুব ছোট একজন অফিসার। আমাকে চাকরির সুবাদে বিভিন্ন ধরনের মানুষের চাল চলন, জীবন জীবিকা, সুখ-দুঃখ, চুর-ডাকাত, ভালো মন্দ মানুষের সাথে চলাফেরা করতে হয়েছে। এই প্রতিযোগিতা মূলক বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ ঠিকে থাকার জন্য কি ধরনের সংগ্রাম করছে, সেটা আমার চেয়ে খুব কম মানুষ বলতে পারবে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহররের কিছু জায়গা এবং প্রত্যেকটি বিভাগীয় ও জেলার শহরের এমন কিছু ফুটপাত রয়েছে যেগুলোতে অবস্থানরত সহায় সম্বলহিন মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখলে আপনার চোখে কান্না চলে আসবে। এ সমস্ত ফুটপাতে অসহায় নারী পুরুষের আহাজারী দেখলে কোন সাধারণ মানুষ চোখের পানি ধরে রাখতে পারবে না। এই সমস্ত মানুষগুলো শুধুমাত্র নিজের জীবন ঠিকিয়ে রাখার প্রতিযোগিতায় রিতীমত যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
এগুলো বলার পিছনের আমার একটাই উদ্দেশ্য, আপনি ছাত্র বয়সে আপনার বাবা মায়ের কষ্টে উপার্জিত টাকা এখনো নষ্ট করতে অভ্যস্ত হলে অন্তত এখন থেকে আপনার বাবার কষ্ট বুঝার চেষ্টা করুন। আপনাকে লেখা পড়ার জন্য যে টাকা মাসে মাসে দিচ্ছে, শুধুমাত্র সেই টাকার দিকে চেয়ে না থেকে নিজে থেকে কিছু করার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে মাস শেষে আপনার আয়ের টাকা হতে বাবাকে একটি লুঙ্গি কিংবা শার্ট কিনে দেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার বাবা আপনার সামান্য উপহার পেয়ে কি পরিমান খুশি হবে, সেটা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
কেন লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করবেন?
প্রবাদ আছে, ছাত্রজীবন সুখের জীবন যদি না হইতো এক্সামিনেশন। এই প্রবাদকে বাস্তবতার সাথে ঘুলিয়ে নিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা পরীক্ষার অজুহাতে পড়ার বাহিরে আর কিছু করতে চায় না। অথচ এমন কোন ছাত্র খুঁজে পাবেন না যারা ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টা শুধু লেখা পড়া করছে। বাস্তবে যদি এমন কোন ছাত্র থাকত, তাহলে বাংলাদেশে মেধাবী ছাত্র ছাত্রীর অভাব হত না। এমনটা হলে বাংলাদেশের শতভাগ ছাত্র ছাত্রীরা পরীক্ষায় সর্বোচ্ছ ফলাফল অর্জন করত।
যে সমস্ত ছাত্র ছাত্রীরা ছাত্রজীবনে পড়াশোনার বাহিরে অন্য কোন কাজ করছে না, তারা লেখাপড়া শেষে প্রফেশনাল লাইফেও খুব একটা সফল হতে পারবে না। লেখাপড়া শেষে হয়তবা সে বড়জোর একটা চাকরি জোগাড় করে নিতে পারবে। কিন্তু চাকরি জীবনে সে খুব বেশি দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হবে না। কারণ চাকরির মধ্যে ম্যানেজমেন্টের অনেক বিষয় জড়িত থাকে, যেগুলো একজন কলেজ ও ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র সহজে বুঝতে পারে না।
অন্যদিকে যারা লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পার্ট টাইম জবের সাথে যুক্ত থাকে, তারা ছাত্র জীবনে বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর মানুষে সাথে চলাফেরা শিখে নেয়। ছাত্র জীবনে তারা ম্যানেজমেন্ট শিখার পাশাপাশি তাদের চাল চলন সহ কথা বার্তায় স্মার্টনেস অটোমেটিক চলে আসে। এতেকরে সে একজন ভালো ছাত্রের চাইতে প্রফেশনাল লাইফে অধিক প্রফেশনালিজম দেখাতে পারে।
আপনি হয়ত ভাবছেন আমার বাবার টাকা আছে, আমার লেখা পড়া ছাড়া অন্যকিছু করার প্রয়োজন নাই। আপনি জেনে রাখুন, লেখাপড়া পাশাপাশি কোন ধরনের কাজ বা চাকরি করলে শুধুমাত্র আপনি টাকা পয়সার বিষয়ে স্ববলম্বী হবেন, এমনটা নয়। আপনার বাবার টাকা থাকলেও আপনি কোন ছোট খাটো ব্যবসা করলে আপনি একজন নরমাল ছাত্রের চাইতে অনেকাংশে স্মার্ট থাকবেন। কাজেই টাকার প্রয়োজন নেই বলে লেখা পড়ার পর অবসর সময়ে স্মার্টফোনে ফেসবুক, ইউটিউব ও ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট করে গার্লফ্রেন্ডের সাথে সময় নষ্ট করলে আপনি চরম বোকামি করছেন।
ছাত্র ছাত্রীদের জন্য পার্ট টাইম জব
কথায় আছে জ্ঞানীর জন্য ইশারা যথেষ্ট। বুদ্ধিমান লোকের চিন্তা সবসময় এক কদম আগে থাকে। সে আজ কি হচ্ছে সেটার চাইতে কাল কি হবে সেটা বুঝে নিতে পারে। আপনি যদি একজন বুদ্ধিমান হন, তাহলে পড়শোনার পাশাপাশি আপনাকে কি করতে হবে, সেটা ইতোপূর্বে বুঝে গেছেন।
আজকের পোস্টে আমি শুধুমাত্র ইন্টারনেট ও অনলাইনে আয়ের উপায় বলব না। আপনি একজন ছাত্র হয়ে থাকলে আপনার মেধাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে পড়শোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব হতে টাকা আয় করে নিজের খরছ যোগানোর পাশাপাশি স্মার্টলি চলতে পারবেন, সে বিষয়ে আলোচনা করব। আপনি একজন বুদ্ধিমান ছাত্র হলে নিচের কয়েকটি পার্ট টাইম জব হতে পড়ালেখার পাশাপাশি আয় করে নিতে পারবেন।
১। প্রাইভেট টিউটর
প্রাভেট টিউশনি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। অনেকে মনেকরে ছাত্রজীবনে নিজ স্বপ্নের চারাগাছে যত্নের সময়টুকু নামমাত্র মূল্যের বিনিময়ে অন্যের স্বপ্নবীজ বোনার নামই টিউশনি। এই প্রবাদ দিয়ে প্রাইভেট টিউটরদের ছোট করা হয় এবং নিরুৎসাহিত করা হয়।
প্রাইভেট টিউশনিকে আমি কখনো খাটো করে দেখিনি। কারণ প্রাভেট টিউশনি শুধুমাত্র একজন ছাত্রের জন্য টাকা আয়ের উৎস নয়। যারা টিউশনি করে তারা একজন নরমাল ছাত্র এর চাইতে অধিক মেধা সম্পন্ন হয়। আপনি যখন বিভিন্ন ক্লাশের ছাত্র ছাত্রীদের পড়াবেন, তখন সেই বিষয়ে আপনি অনেক দক্ষ হয়ে উঠবেন, যেটা পরবর্তীতে আপনার চাকরির ইন্টারভিউ এর ক্ষেত্রে অনেকটা উপকারে আসবে।
ছাত্র মহলে এই বিষয়টা একদম কমন, একজন প্রাইভেট টিউশনি করা ছাত্র আরেকজন প্রাভেট টিউশনি না করা ছাত্রের চাইতে যেকোন চাকরির ইন্টারভিউতে ভালো করতে পারে। এটার বাস্তব প্রমান আমি নিজেই। একমাত্র প্রাভেট টিউশনি করার কারনে আমি চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পেরেছিলাম।
আপনি বিভিন্ন ধরনের প্রাইভেট টিউশনি করতে পারেন। বাসায় বাসায় গিয়ে আপনি বিভিন্ন ক্লাশের ছাত্রদের পড়াতে পারেন। আপনি যদি গণিত ও ইংরেজী বিষয়ে দক্ষ হন, তাহলে এ কাজটি সহজে পেয়ে যাবেন। তাছাড়া ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, একাউন্টিং সহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে টিউশনির বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। আপনি উপরের যেকোন বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন হলে টিউশনি পাওয়া আপনার জন্য কোন ব্যাপার হবে না।
প্রথম অবস্থায় আপনি বাসায় গিয়ে প্রাইভেট টিউশনি করলে একসময় আপনি নামকরা টিউটর হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারবেন। নামকরা টিউটর হতে পারলে তখন আপনার নিজেস্ব একটি কোচিং সেন্টার খুলে প্রচুর পরিমানে টাকা টিউশনি করে ইনকাম করতে পারবেন। তাছাড়া নামকরা টিউটররা বিভিন্ন ভালোমানের কোচিং সেন্টারে টিউটর হিসেবে কাজ করার অফার পেয়ে থাকেন। এ ধরনের টিউটররা প্রতি ঘন্টা হিসেবে স্মার্ট এমাউন্ট ইনকাম করে নিতে পারেন।
আপনার যদি কোন বাইক থাকে, তাহলে খুব সহজে একজন রাইডার হয়ে ভালোমানের টাকা আয় করতে পারবেন। আপনার বাইক থাকলে Uber অথবা Pathao এ রাইডিং এর কাজ করার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। এখানে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আপনার কোন টাকা লাগবে না। শুধুমাত্র নিজের সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়ে কাজটি করতে পারেন।
অনেক ছাত্ররা লজ্জার কারনে এ ধরনের কাজ করতে চায় না। এটাই হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষের প্রধান সমস্যা। কোন কাজ করতে চাইলে নিজের অবস্থার কথা চিন্তা না করে লোকজন কি বলবে সেটা প্রায়রিটি দেয়। লোক কি বলবে সেটা চিন্তা করলে আপনি কখনো নিজের অবস্থার উন্নতি করতে পারবেন না।
আমি সিলেট শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকদিন ডিউটি করেছিলাম। সেই সূত্রে ভার্সিটির কয়েকজন বিদেশী ছাত্রদের সাথে আমার পরিচয় হয়। একদিন তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, এতসব উন্নত দেশ থাকতে আপনারা বাংলাদেশে লেখাপড়া করছেন কেন? তারা বলে বাংলাদেশে তুলনা মূলকভাবে অন্যান্য দেশের চাইতে লেখাপাড়ার পাশাপাশি বাহিরে কাজ করা যায়। প্রথমে তাদের কথা শুনে আমি অবাক হই এবং তাদের জিজ্ঞেস করি, আপনারা লেখাপড়ার পাশাপাশি কি কাজ করছেন। তাদের মধ্যে ২ জন বলে তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি সিলেট শহরের ভীতরে টম টম গাড়ি চালায়। তখন আমি বলেছিলাম, টমটম চালাতে আপনাদের খারাপ লাগে না? তারা বলে এখানে খারাপ লাগার কি আছে। আমরা কাজ করছি, খারাপ কিছু করছি না। সে দিন তাদের কথা আমাকে মুগ্ধ করেছিল।
বিদেশ থেকে বাংলাদেশ এসে তারা পড়ালেখার পাশাপাশি টাকা আয় করছে, অথচ আমরা বাইক রাইডিং এর কাজ করতে নিজেকে ছোট মনেকরি। সত্যিই বাঙ্গালি জাতি হিসেবে আমরা বড়ই শৌখিন। পকেটে দশ টাকা থাকলে পুরো টাকা খরছ করতে দ্বিধাবোধ করি না।
মহিলারা চাইলে খুব সহজে বিভিন্ন বড় বড় কসমেটিক শপ ও ফ্যাশন ডিজানের এবং বড় বড় কাপড়ের মার্কেটগুলোতে কাজ নিতে পারেন। এ ধরনের মার্কেটে প্রতিদিন ৪-৫ ঘন্টা কাজ করে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা খুব সহজে আয় করা যায়। সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানে নিজের সুবিধামতো সময় বেছে নেওয়ারও সুযোগ থাকে।
এ ধরনের কাজ আপনার কাছে ছোট মনে হতে পারে। কিন্তু আপনি হয়ত জানেন না যে, আমাদের দেশের যে সকল ছাত্র ছাত্রীরা স্কলারশীপ পেয়ে বিভিন্ন দেশে লেখাপড়া করতে যায়, তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেল ও রেষ্টুরেন্টে কাজ করে তাদের পড়শোনার ও চলার খরছ যোগায়। আমার এক কাজিন বর্তমানে চিনের একটি রেষ্টুরেন্টে পার্ট টাইম কাজ করে গত তিন বছর ধরে লেখাপড়া করে যাচ্ছে। কাজেই কোন কাজকে খাটো করে না দেখে, পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেকে সাবলম্বি করার জন্য আপনার সুবিধামত খন্ডকালীন চাকরি করতে পারেন।
আপনার যদি ফটোগ্রাফি সম্পর্কে অভীজ্ঞতা থাকে, তাহলে ডিএসএলআর ক্যামেরা ছাড়াও আপনি বিভিন্ন ফটো ষ্টুডিওতে কন্ট্রাক এর মাধ্যমে কাজ করে ফটোগ্রাফি করে টাকা আয় করতে পারবেন। কারণ ফটো ষ্টুডিওতে প্রফেশনাল ছবি তোলার জন্য অনেক ভালোমানের ফটোগ্রাফারের প্রয়োজন হয়।
আপনি হয়ত প্রায় সময় দেখে থাকেন যে, বিভিন্ন ধরনের বিয়ের অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র ছবি তোলার জন্য একজন ফটোগ্রাফার নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। বিয়ের বিভিন্ন মুহুর্তগুলোকে ফ্রেমে বন্দি করে রাখার জন্য একজন ভালো ফটোগ্রাফারের প্রয়োজন হয়। বড় বড় বিয়ের অনুষ্ঠানে ফট্রোগ্রাফির জন্য ফটোষ্টুডিও ৩০-৫০ হাজার টাকা ডিমান্ড করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে আপনি একজন ভালোমানের ফটোগ্রাফার হলে বিভিন্ন ষ্টুডিও এর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন। তারা আপনাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাজ করার জন্য ডেকে নিয়ে আসবে।
তাছাড়া বর্তমানে অনলাইন মার্কেটেও ফটোগ্রাফির বেশ ডিমান্ড রয়েছে। আপনার ভালোমানের ছবি থাকলে আপনি সেগুলো বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেপ্লেসগুলোতে বিক্রি করতে পারেন। আপনি Fiver মার্কেটপ্লেসে গেলে এ ধরনের অনেক কাজ পেয়ে যাবেন।
ফটোগ্রাফি সম্পর্কে আপনার কোন অভীজ্ঞতা না থাকলে যেকোন একটি ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠান থেকে ৭ দিনের একটি ট্রেনিং নিয়ে আপনি এ বিষয়ে অভীজ্ঞ হয়ে উঠতে পারেন। সেই সাথে ফটো এ্যাডিট করার জন্য ফটোশপের টুকটাক কাজ শিখে নিলে আপনার জন্য আরো ভালো হবে। ছবি তোলার পর সেগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলার জন্য অনলাইনে কিছু টুলস পাওয়া যায়, সেগুলো দিয়ে আপনার ফটো আরো অধিক সুন্দর করে তুলে সেগুলো অনলাইনে বিক্রি করেও টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আপনি যেহেতু একজন ছাত্র সেহেতু এখানে একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে আপনার অভীজ্ঞতার আলোকে ভিডিও তৈরি করে সেগুলোকে ইউটিউবে আপলোড করে টাকা আয় করতে পারেন। আপনি যদি গনিত বা ইংরেজিতে দক্ষ হন, তাহলে সেই বিষয়ে ভিডিও তৈরি করতে পারেন। আপনার ভিডিও যখন প্রচুর পরিমানে ভিউ হবে তখন আপনি গুগল এডসেন্স ও এফিলিয়েট সহ বিভিন্ন উপায়ে টাকা আয় করতে পারবেন।
এগুলো অবশ্যই পড়বেন -
ইউটিউব বিষয়ে খুব বেশি কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনেকরি না। কারণ এখন ইউটিউব সম্পর্কে সবাই কম বেশি জানে। কিভাবে ইউটিউব থেকে আয় করতে হয়, সে বিষয়ে আমাদের ব্লগে একটি বিস্তারিত পোস্ট শেয়ার করা আছে। আপনি পোস্টটি পড়ে নিবেন, তাহলে ইউটিউব থেকে আয় করার সকল উপায় জেনে নিতে পারবেন।
এটাও অনেকটা ইউটিউবের মত। ব্লগিং আর ইউটিউব এর মধ্যে শুধুমাত্র পার্থক্য হচ্ছে ইউটিউবে ক্যামেরার সামনে বসে নিজে যা জানেন তা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হয়, আর ব্লগিং এর ক্ষেত্রে আপনি যেটা জানেন সেটা লেখার মাধ্যমে মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। আপনি যদি এই দুটি একসাথে করতে পারেন, তাহলে একসময় আপনি লেখাপড়ার পাশাপাশি অনলাইন হতে একটি স্মার্ট এমাউন্ট আর্নিং করতে সক্ষম হবেন।
এগুলো অবশ্যই পড়বেন -
কিভাবে একটি ফ্রি ব্লগ করতে হয় এবং ব্লগিং করে কিভাবে অনলাইন হতে টাকা আয় করার যায়, এসব বিষয়ে নিয়ে আমাদের ব্লগে কয়েকটি পোস্ট রয়েছে। সে জন্য আমি এখানে পুনরায় আলোচনা করে পোস্ট বড় করতে চাইছি না। আমাদের ব্লগের লিংকগুলো এখানে দিয়ে দিচ্ছি, আপনি সেগুলো পড়লে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
যেহেতু পর্যাপ্ত চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না, সেহেতু বর্তমান সময়ে বিকল্প ক্যারিয়ার হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে ফ্রিল্যান্সিং ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় দশ লক্ষ এর কাছাকাছি ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। এ সংখ্যাটা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে নির্দিষ্ট কোনো বিভাগ নেই। এখানে আপনি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন।
আপনি একজন ছাত্র হিসেবে যে কাজে আপনার দক্ষতা ও অভীজ্ঞতা রয়েছে, আপনি সেই বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সি মার্কেটপ্লেসগুলোতে ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এসইও, অনলাইন মার্কেটিং, লোগো ডিজাইন ও প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট বিষয়গুলোর বেশি ডিমান্ড রয়েছে। এগুলো ছাড়াও আপনি কোন বিষয়ে লেখালেখিতে দক্ষ হলে লেখালেখির মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে পড়ালেখার পাশাপাশি টাকা আয় করতে পারবেন।
ওয়েব ডিজাইন জানলে পড়াশোনার পাশাপাশি আপনি বিভিন্ন ভাবে আয় করতে পারবেন। ওয়েব ডিজাইন জানা থাকলে আপনি বিভিন্ন ধরনের আইটি কোম্পানিতে পার্ট টাইম জব করতে পারবেন। এ ধরনের আইটি কোম্পানিতে একজন ওয়েব ডিজাইনারকে নাইন-টু-ফাইভ ফুল টাইম জব করতে হয় না। প্রতিদিন মাত্র ২-৩ ঘন্টা কাজ করে মাসে ২০-২৫ টাকা খুব সহজে আয় করতে পারবেন। তাছাড়া কিছু কিছু ওয়েব ডিজাইনার যুক্তিভিত্তিক কাজ করে সহজে আরো বেশি টাকা আয় করে নেয়।
তাছাড়া ওয়েব ডিজাইন জানলে আপনি বিভিন্ন ধরনে ওয়ার্ডপ্রেস থিম ও ব্লগার থিম তৈরি করে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে বিক্রি করতে পারবেন। ওয়েব ডিজাইন ও ওয়েব ডেভেলপমেন্টের রিসোর্স বিক্রি করার জন্য Theme Forest হচ্ছে বেশ জনপ্রিয়। আপনি একটি ব্লগার থিম বা ওয়ার্ডপ্রেস থিম তৈরি করে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে বিক্রির জন্য রাখলে সেখান থেকে পেসিভ ইনকাম করতে পারবেন। আপনার থিমটি যতবার অনলাইনে বিক্রি হবে ততবার টাকা আয় করে নিতে পারবে। Theme Forest এ এমন কিছু থিম রয়েছে যেগুলো ৪০ হাজারেরও বেশি বার বিক্রি হয়েছে। তাহলে আপনি চিন্তা করুন, একটি থিম যদি ৬০ ডলার করে হয়, তাহলে একজন ওয়েব ডিজাইনার কি পরিমানে টাকা আয় করছেন।
তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রচুর ডিমান্ড রয়েছে। অনলাইনে প্রতি নিয়ত বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কোন না কো জিনিস ডিজাইন করিয়ে নেওয়ার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনার খুঁজে থাকে। আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারেন, তাহলে খুব সামান্য সময় কাজ করে আপনার লেখাপড়া ঠিকমত চলমান রেখে সহজে এক্সট্রা মানি আয় করতে পারবেন।
ইউটিউব এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পর এখন ভিডিও এডিটিং আরো জনপ্রিয় উঠেছে। যে সকল ইউটিউবারদের চ্যানেলে মিলিয়ন মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, তারা তাদের ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও এডিটিং করার জন্য ভালোমানের ভিডিও এডিটর নিয়োগ দিয়ে থাকে। আপনি ভালো ভিডিও এডিটিং জানলে এই সকল কোম্পানিতে কাজ করে পড়শোনার পাশাপাশি টাকা আয় করতে পারেন।
ভিডিও এডিটিং শেখার জন্য অনেক জনপ্রিয় সফটওয়্যার রয়েছে। প্রফেশনাল মানের ভিডিও এডিটিং এর জন্য Adobe Premiere Pro সবচেয়ে জনপ্রিয় সফটওয়্যার। এছাড়াও আপনি Filmora Video Editor ও Corel VideoStudio এবং Camtasia দিয়ে ভিডিও এডিটিং শিখে নিতে পারেন। ভিডিও এডিটিং শিখতে পারলে আপনি অনলাইন ও অফলাইন উভয় মার্কেট থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
সাধারণত ঘরে বসে প্রোডাক্ট বিক্রি করে আয় করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রোডাক্ট এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। কারণ এগুলো নষ্ট হওয়ার কোন ঝুকি থাকে না। আরো বড় সুবিধা হচ্ছে বিক্রি করার না গেলে সেগুলো কোম্পানির কাছে ফেরত দেওয়া যায়। অনলাইনে সার্চ করলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, বর্তমানে কি ধরনের প্রোডাক্টগুলো অনলাইন মার্কেটে বেশি সেল হয়। শুধুমাত্র ইন্টারনেট রিসার্চ করে আপনাকে একটু বুদ্ধি খাটাতে হবে।
আপনার যদি কোন নিজেস্ব প্রোডাক্ট না থাকে, সে ক্ষেত্রে অন্যের প্রোডাক্ট সেল করে সেখাল থেকে কমিশনের মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের এফিলিয়েট মার্কেট আছে যেগুলোতে আপনার একাউন্ট তৈরি প্রোডাক্ট সেল করার মাধ্যমে কমিশন নিয়ে টাকা আয় করতে পারেন।
শহরে অনেক ধরনের ব্যবসা করার সুযোগ রয়েছে। আপনি যেহেতু একজন ছাত্র সেহেতু বড় কোন ব্যবসা না করে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করতে পারেন। শহরের ফুটপাতে বিভিন্ন ধরনের ছোট খাটো চায়ের স্টল করতে পারেন। এতে লজ্জার কিছু নেই। বেচে থাকার তাগিদে চুরি ডাকাতি সহ মানুষ খুন করছে, কিন্তু আপনি সে ধরনের কিছু করছেন না, তাহলে আপনার লজ্জা হবে কেন? ইতিহাস স্বাক্ষী দিচ্ছে, পৃথিবীর সকল সফল ব্যবসায়িরা ছোট থেকে কালক্রমে বড় হয়েছেন।
প্রাইভেট টিউশনিকে আমি কখনো খাটো করে দেখিনি। কারণ প্রাভেট টিউশনি শুধুমাত্র একজন ছাত্রের জন্য টাকা আয়ের উৎস নয়। যারা টিউশনি করে তারা একজন নরমাল ছাত্র এর চাইতে অধিক মেধা সম্পন্ন হয়। আপনি যখন বিভিন্ন ক্লাশের ছাত্র ছাত্রীদের পড়াবেন, তখন সেই বিষয়ে আপনি অনেক দক্ষ হয়ে উঠবেন, যেটা পরবর্তীতে আপনার চাকরির ইন্টারভিউ এর ক্ষেত্রে অনেকটা উপকারে আসবে।
ছাত্র মহলে এই বিষয়টা একদম কমন, একজন প্রাইভেট টিউশনি করা ছাত্র আরেকজন প্রাভেট টিউশনি না করা ছাত্রের চাইতে যেকোন চাকরির ইন্টারভিউতে ভালো করতে পারে। এটার বাস্তব প্রমান আমি নিজেই। একমাত্র প্রাভেট টিউশনি করার কারনে আমি চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পেরেছিলাম।
আপনি বিভিন্ন ধরনের প্রাইভেট টিউশনি করতে পারেন। বাসায় বাসায় গিয়ে আপনি বিভিন্ন ক্লাশের ছাত্রদের পড়াতে পারেন। আপনি যদি গণিত ও ইংরেজী বিষয়ে দক্ষ হন, তাহলে এ কাজটি সহজে পেয়ে যাবেন। তাছাড়া ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, একাউন্টিং সহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে টিউশনির বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। আপনি উপরের যেকোন বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন হলে টিউশনি পাওয়া আপনার জন্য কোন ব্যাপার হবে না।
প্রথম অবস্থায় আপনি বাসায় গিয়ে প্রাইভেট টিউশনি করলে একসময় আপনি নামকরা টিউটর হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারবেন। নামকরা টিউটর হতে পারলে তখন আপনার নিজেস্ব একটি কোচিং সেন্টার খুলে প্রচুর পরিমানে টাকা টিউশনি করে ইনকাম করতে পারবেন। তাছাড়া নামকরা টিউটররা বিভিন্ন ভালোমানের কোচিং সেন্টারে টিউটর হিসেবে কাজ করার অফার পেয়ে থাকেন। এ ধরনের টিউটররা প্রতি ঘন্টা হিসেবে স্মার্ট এমাউন্ট ইনকাম করে নিতে পারেন।
২। রাইড শেয়ারিং
সময় এখন প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এখন বিভিন্ন ধরনের রাইড শেয়ারিং এর কাজ করা হচ্ছে। আপনি নিশ্চিয় Uber ও Pathao এর নাম শুনেছেন। এ গুলো হচ্ছে বাংলাদেশে সবচাইতে জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং প্লাটফর্ম। এখানে আপনি মোবাইল এপের মাধ্যমে রাইড করতে পারেন আবার নিজে একজন রাইডার হয়ে টাকা ইনকাম করে নিতে পারেন।আপনার যদি কোন বাইক থাকে, তাহলে খুব সহজে একজন রাইডার হয়ে ভালোমানের টাকা আয় করতে পারবেন। আপনার বাইক থাকলে Uber অথবা Pathao এ রাইডিং এর কাজ করার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। এখানে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আপনার কোন টাকা লাগবে না। শুধুমাত্র নিজের সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়ে কাজটি করতে পারেন।
অনেক ছাত্ররা লজ্জার কারনে এ ধরনের কাজ করতে চায় না। এটাই হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষের প্রধান সমস্যা। কোন কাজ করতে চাইলে নিজের অবস্থার কথা চিন্তা না করে লোকজন কি বলবে সেটা প্রায়রিটি দেয়। লোক কি বলবে সেটা চিন্তা করলে আপনি কখনো নিজের অবস্থার উন্নতি করতে পারবেন না।
আমি সিলেট শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকদিন ডিউটি করেছিলাম। সেই সূত্রে ভার্সিটির কয়েকজন বিদেশী ছাত্রদের সাথে আমার পরিচয় হয়। একদিন তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, এতসব উন্নত দেশ থাকতে আপনারা বাংলাদেশে লেখাপড়া করছেন কেন? তারা বলে বাংলাদেশে তুলনা মূলকভাবে অন্যান্য দেশের চাইতে লেখাপাড়ার পাশাপাশি বাহিরে কাজ করা যায়। প্রথমে তাদের কথা শুনে আমি অবাক হই এবং তাদের জিজ্ঞেস করি, আপনারা লেখাপড়ার পাশাপাশি কি কাজ করছেন। তাদের মধ্যে ২ জন বলে তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি সিলেট শহরের ভীতরে টম টম গাড়ি চালায়। তখন আমি বলেছিলাম, টমটম চালাতে আপনাদের খারাপ লাগে না? তারা বলে এখানে খারাপ লাগার কি আছে। আমরা কাজ করছি, খারাপ কিছু করছি না। সে দিন তাদের কথা আমাকে মুগ্ধ করেছিল।
বিদেশ থেকে বাংলাদেশ এসে তারা পড়ালেখার পাশাপাশি টাকা আয় করছে, অথচ আমরা বাইক রাইডিং এর কাজ করতে নিজেকে ছোট মনেকরি। সত্যিই বাঙ্গালি জাতি হিসেবে আমরা বড়ই শৌখিন। পকেটে দশ টাকা থাকলে পুরো টাকা খরছ করতে দ্বিধাবোধ করি না।
৩। খণ্ডকালীন চাকরি
বিভিন্ন নামি দামি হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, ফ্যাশন হাউস ও টুরিস্ট এলাকায় টুর গাইডার হিসেবে খন্ডকালীন চাকরি করতে পারেন। যাদের চাল-চলন ও কথার ভঙ্গিমায় স্মার্টনেস আছে, তারা এ ধরনের খন্ডকালীন চাকরি খুব সহজে ম্যানেজ করে নিতে পারবেন।মহিলারা চাইলে খুব সহজে বিভিন্ন বড় বড় কসমেটিক শপ ও ফ্যাশন ডিজানের এবং বড় বড় কাপড়ের মার্কেটগুলোতে কাজ নিতে পারেন। এ ধরনের মার্কেটে প্রতিদিন ৪-৫ ঘন্টা কাজ করে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা খুব সহজে আয় করা যায়। সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানে নিজের সুবিধামতো সময় বেছে নেওয়ারও সুযোগ থাকে।
এ ধরনের কাজ আপনার কাছে ছোট মনে হতে পারে। কিন্তু আপনি হয়ত জানেন না যে, আমাদের দেশের যে সকল ছাত্র ছাত্রীরা স্কলারশীপ পেয়ে বিভিন্ন দেশে লেখাপড়া করতে যায়, তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেল ও রেষ্টুরেন্টে কাজ করে তাদের পড়শোনার ও চলার খরছ যোগায়। আমার এক কাজিন বর্তমানে চিনের একটি রেষ্টুরেন্টে পার্ট টাইম কাজ করে গত তিন বছর ধরে লেখাপড়া করে যাচ্ছে। কাজেই কোন কাজকে খাটো করে না দেখে, পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেকে সাবলম্বি করার জন্য আপনার সুবিধামত খন্ডকালীন চাকরি করতে পারেন।
৪। ফটোগ্রাফি
ফটোগ্রাফি অনেক শৌখিন ও ডিমান্ডএবল একটি পেশা। অনলাইন ও অফলাইন উভয় ক্ষেত্রে ফটোগ্রাফির প্রচুর ডিমান্ড রয়েছে। আপনার একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা থাকলে খুব সহজে ফটোগ্রাফির কাজটি করতে পারবেন।আপনার যদি ফটোগ্রাফি সম্পর্কে অভীজ্ঞতা থাকে, তাহলে ডিএসএলআর ক্যামেরা ছাড়াও আপনি বিভিন্ন ফটো ষ্টুডিওতে কন্ট্রাক এর মাধ্যমে কাজ করে ফটোগ্রাফি করে টাকা আয় করতে পারবেন। কারণ ফটো ষ্টুডিওতে প্রফেশনাল ছবি তোলার জন্য অনেক ভালোমানের ফটোগ্রাফারের প্রয়োজন হয়।
আপনি হয়ত প্রায় সময় দেখে থাকেন যে, বিভিন্ন ধরনের বিয়ের অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র ছবি তোলার জন্য একজন ফটোগ্রাফার নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। বিয়ের বিভিন্ন মুহুর্তগুলোকে ফ্রেমে বন্দি করে রাখার জন্য একজন ভালো ফটোগ্রাফারের প্রয়োজন হয়। বড় বড় বিয়ের অনুষ্ঠানে ফট্রোগ্রাফির জন্য ফটোষ্টুডিও ৩০-৫০ হাজার টাকা ডিমান্ড করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে আপনি একজন ভালোমানের ফটোগ্রাফার হলে বিভিন্ন ষ্টুডিও এর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন। তারা আপনাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাজ করার জন্য ডেকে নিয়ে আসবে।
তাছাড়া বর্তমানে অনলাইন মার্কেটেও ফটোগ্রাফির বেশ ডিমান্ড রয়েছে। আপনার ভালোমানের ছবি থাকলে আপনি সেগুলো বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেপ্লেসগুলোতে বিক্রি করতে পারেন। আপনি Fiver মার্কেটপ্লেসে গেলে এ ধরনের অনেক কাজ পেয়ে যাবেন।
ফটোগ্রাফি সম্পর্কে আপনার কোন অভীজ্ঞতা না থাকলে যেকোন একটি ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠান থেকে ৭ দিনের একটি ট্রেনিং নিয়ে আপনি এ বিষয়ে অভীজ্ঞ হয়ে উঠতে পারেন। সেই সাথে ফটো এ্যাডিট করার জন্য ফটোশপের টুকটাক কাজ শিখে নিলে আপনার জন্য আরো ভালো হবে। ছবি তোলার পর সেগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলার জন্য অনলাইনে কিছু টুলস পাওয়া যায়, সেগুলো দিয়ে আপনার ফটো আরো অধিক সুন্দর করে তুলে সেগুলো অনলাইনে বিক্রি করেও টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
৫। ইউটিউব
ইউটিউব এমন একটি প্লাটফর্ম এখানে আপনি যেকোন ধরনের ভিডিও আপলোড করতে পারেন। অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে ইউটিউব এখন বেশ জনপ্রিয়। আপনি যে বিষয়ে অভীজ্ঞ এখানে সেই বিষয়ে কাজ করে অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে পারেন।আপনি যেহেতু একজন ছাত্র সেহেতু এখানে একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে আপনার অভীজ্ঞতার আলোকে ভিডিও তৈরি করে সেগুলোকে ইউটিউবে আপলোড করে টাকা আয় করতে পারেন। আপনি যদি গনিত বা ইংরেজিতে দক্ষ হন, তাহলে সেই বিষয়ে ভিডিও তৈরি করতে পারেন। আপনার ভিডিও যখন প্রচুর পরিমানে ভিউ হবে তখন আপনি গুগল এডসেন্স ও এফিলিয়েট সহ বিভিন্ন উপায়ে টাকা আয় করতে পারবেন।
এগুলো অবশ্যই পড়বেন -
- কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করবেন?
- ইউটিউব থেকে আয়: কিভাবে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা যায়?
- কিভাবে ইউটিউব ভিডিও এসইও করে ভিডিও এর ভিউ বাড়াবেন?
- ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয়?
ইউটিউব বিষয়ে খুব বেশি কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনেকরি না। কারণ এখন ইউটিউব সম্পর্কে সবাই কম বেশি জানে। কিভাবে ইউটিউব থেকে আয় করতে হয়, সে বিষয়ে আমাদের ব্লগে একটি বিস্তারিত পোস্ট শেয়ার করা আছে। আপনি পোস্টটি পড়ে নিবেন, তাহলে ইউটিউব থেকে আয় করার সকল উপায় জেনে নিতে পারবেন।
৬। ব্লগিং - লেখালেখি করা
আপনার যদি লেখালেখির অভ্যাস থাকে, তাহলে একটি ফ্রি ব্লগ তৈরি করে ব্লগে লেখালেখি করে অনলাইন হতে ভালোমানের টাকা আয় করতে পারেন। অনলাইনে আয় করার ক্ষেত্রে ব্লগিং একটি জনপ্রিয় প্লাটফর্ম। শুধুমাত্র ব্লগে লেখালেখি করে পুরো পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ অনলাইন হতে আয় করছে।এটাও অনেকটা ইউটিউবের মত। ব্লগিং আর ইউটিউব এর মধ্যে শুধুমাত্র পার্থক্য হচ্ছে ইউটিউবে ক্যামেরার সামনে বসে নিজে যা জানেন তা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হয়, আর ব্লগিং এর ক্ষেত্রে আপনি যেটা জানেন সেটা লেখার মাধ্যমে মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। আপনি যদি এই দুটি একসাথে করতে পারেন, তাহলে একসময় আপনি লেখাপড়ার পাশাপাশি অনলাইন হতে একটি স্মার্ট এমাউন্ট আর্নিং করতে সক্ষম হবেন।
এগুলো অবশ্যই পড়বেন -
- ব্লগ তৈরি করার নিয়ম: কিভাবে একটি ফ্রি ব্লগ তৈরী করব?
- ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি: কিভাবে ফ্রি ওয়েবসাইট বানানো যায়?
- কিভাবে BlogSpot ব্লগে Custom Domain সেটআপ করতে হয়?
- Blogging নাকি YouTube: কোনটি দিয়ে বেশি টাকা ইনকাম করা যায়?
- ব্লগ তৈরি করে আয়: ব্লগ থেকে কিভাবে আয় করা যায়?
কিভাবে একটি ফ্রি ব্লগ করতে হয় এবং ব্লগিং করে কিভাবে অনলাইন হতে টাকা আয় করার যায়, এসব বিষয়ে নিয়ে আমাদের ব্লগে কয়েকটি পোস্ট রয়েছে। সে জন্য আমি এখানে পুনরায় আলোচনা করে পোস্ট বড় করতে চাইছি না। আমাদের ব্লগের লিংকগুলো এখানে দিয়ে দিচ্ছি, আপনি সেগুলো পড়লে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
৭। ফ্রিল্যান্সিং
বাংলাদেশে শিক্ষার হার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। দেশে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সেই অনুপাতে সরকার চাকরি দিতে পারছে না। আর বাংলাদেশ সরকার এ দেশের সকল শিক্ষিতদের চেষ্টা করলেও চাকরি দিতে পারবে না। কারণ মাত্র ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের এই ছোট দেশের বিশকোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রত্যেকটি পরিবারে একটি করে চাকরি দেওয়ার মত কর্মক্ষেত্র সরকারের কাছে নেই। সে জন্য সরকার এখন শিক্ষতদের কাজে লাগানোর জন্য বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। আপনার যদি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে কোন ধারনা না থাকে, তাহলে যেকোন প্রতিষ্ঠান থেকে অল্প সময়ে শিখে নিতে পারেন।যেহেতু পর্যাপ্ত চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না, সেহেতু বর্তমান সময়ে বিকল্প ক্যারিয়ার হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে ফ্রিল্যান্সিং ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় দশ লক্ষ এর কাছাকাছি ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। এ সংখ্যাটা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে নির্দিষ্ট কোনো বিভাগ নেই। এখানে আপনি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন।
আপনি একজন ছাত্র হিসেবে যে কাজে আপনার দক্ষতা ও অভীজ্ঞতা রয়েছে, আপনি সেই বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সি মার্কেটপ্লেসগুলোতে ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এসইও, অনলাইন মার্কেটিং, লোগো ডিজাইন ও প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট বিষয়গুলোর বেশি ডিমান্ড রয়েছে। এগুলো ছাড়াও আপনি কোন বিষয়ে লেখালেখিতে দক্ষ হলে লেখালেখির মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে পড়ালেখার পাশাপাশি টাকা আয় করতে পারবেন।
৮। ওয়েব ডিজাইন
লেখাপড়া করার পাশাপাশি অনলাইন ও অফলাইনে আয়ের জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ওয়েব ডিজাইন। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে ওয়েব ডিজাইন প্রচুর পরিমানে ডিমান্ড রয়েছে। তবে এটা শিখতে কিছুটা সময় লাগবে এবং শেখার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান হতে ছয় মাস বা এক বছরের একটি কোর্স করতে হবে। ধৈর্যসহকারে শিখলে খুব অল্পদিনে আপনিও একজন ওয়েব ডিজাইনার ও ওয়েব ডেভেলপার হতে পারবেন।ওয়েব ডিজাইন জানলে পড়াশোনার পাশাপাশি আপনি বিভিন্ন ভাবে আয় করতে পারবেন। ওয়েব ডিজাইন জানা থাকলে আপনি বিভিন্ন ধরনের আইটি কোম্পানিতে পার্ট টাইম জব করতে পারবেন। এ ধরনের আইটি কোম্পানিতে একজন ওয়েব ডিজাইনারকে নাইন-টু-ফাইভ ফুল টাইম জব করতে হয় না। প্রতিদিন মাত্র ২-৩ ঘন্টা কাজ করে মাসে ২০-২৫ টাকা খুব সহজে আয় করতে পারবেন। তাছাড়া কিছু কিছু ওয়েব ডিজাইনার যুক্তিভিত্তিক কাজ করে সহজে আরো বেশি টাকা আয় করে নেয়।
তাছাড়া ওয়েব ডিজাইন জানলে আপনি বিভিন্ন ধরনে ওয়ার্ডপ্রেস থিম ও ব্লগার থিম তৈরি করে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে বিক্রি করতে পারবেন। ওয়েব ডিজাইন ও ওয়েব ডেভেলপমেন্টের রিসোর্স বিক্রি করার জন্য Theme Forest হচ্ছে বেশ জনপ্রিয়। আপনি একটি ব্লগার থিম বা ওয়ার্ডপ্রেস থিম তৈরি করে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে বিক্রির জন্য রাখলে সেখান থেকে পেসিভ ইনকাম করতে পারবেন। আপনার থিমটি যতবার অনলাইনে বিক্রি হবে ততবার টাকা আয় করে নিতে পারবে। Theme Forest এ এমন কিছু থিম রয়েছে যেগুলো ৪০ হাজারেরও বেশি বার বিক্রি হয়েছে। তাহলে আপনি চিন্তা করুন, একটি থিম যদি ৬০ ডলার করে হয়, তাহলে একজন ওয়েব ডিজাইনার কি পরিমানে টাকা আয় করছেন।
৯। গ্রাফিক্স ডিজাইন
পড়াশুনার পাশাপাশি গ্রাফিক্স ডিজাইন করে আয় করার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। কারণ গ্রাফিক্স ডিজাইনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে সবাই এখন তার কোম্পানির জন্য কোন না কোন লোগো, ব্যানার ও আনুষাঙ্গিক ডিজিটাল ডিজাইন তৈরি করতে চায়। দেশ যত ডিজিটাল হচ্ছে গ্রফিক্স ডিজাইনের চাহিদা ততই বাড়ছে।তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রচুর ডিমান্ড রয়েছে। অনলাইনে প্রতি নিয়ত বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কোন না কো জিনিস ডিজাইন করিয়ে নেওয়ার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনার খুঁজে থাকে। আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারেন, তাহলে খুব সামান্য সময় কাজ করে আপনার লেখাপড়া ঠিকমত চলমান রেখে সহজে এক্সট্রা মানি আয় করতে পারবেন।
১০। ভিডিও এডিটিং
ভিডিও এডিটিং হচ্ছে একটি পোস্ট প্রোডাকশন কাজ। যেখানে ভিডিওর টাইটেল, গ্রাফিক্স, কালার কারেকশন, সাউন্ড মিক্সিং, ইফেক্ট সহ সব ধরণের কাজ করা হয়। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজকে সুবিন্যাস এবং সুনিপুণ করে উপস্থাপণ করাই হল ভিডিও এডিটিং এর উদ্দেশ্য। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন অনুষ্ঠান, বিভিন্ন বিজ্ঞাপণ নিমার্ণের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে ব্যক্তিজীবনের প্রতিটা অংশে এখন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভিডিও এডিটিং অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।ইউটিউব এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পর এখন ভিডিও এডিটিং আরো জনপ্রিয় উঠেছে। যে সকল ইউটিউবারদের চ্যানেলে মিলিয়ন মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, তারা তাদের ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও এডিটিং করার জন্য ভালোমানের ভিডিও এডিটর নিয়োগ দিয়ে থাকে। আপনি ভালো ভিডিও এডিটিং জানলে এই সকল কোম্পানিতে কাজ করে পড়শোনার পাশাপাশি টাকা আয় করতে পারেন।
ভিডিও এডিটিং শেখার জন্য অনেক জনপ্রিয় সফটওয়্যার রয়েছে। প্রফেশনাল মানের ভিডিও এডিটিং এর জন্য Adobe Premiere Pro সবচেয়ে জনপ্রিয় সফটওয়্যার। এছাড়াও আপনি Filmora Video Editor ও Corel VideoStudio এবং Camtasia দিয়ে ভিডিও এডিটিং শিখে নিতে পারেন। ভিডিও এডিটিং শিখতে পারলে আপনি অনলাইন ও অফলাইন উভয় মার্কেট থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
১১। প্রোডাক্ট সেল করা
আপনার যদি কোন নিজেস্ব প্রোডাক্ট থাকে, তাহলে সেগুলো আপনি চাইলে এখন ঘরে বসে বিক্রি করতে পারেন। আপানার একটি ফেসবুক পেজ থাকলে সেই ফেসবুক পেজে আপনার প্রোডাক্ট এর ভালো দিকগুলো তুলে ধরে ফেসবুক পেজে পোস্ট করতে পারেন। তাছাড়া ফেসবুকে আপনার প্রোডাক্ট বুস্ট করে আরো সহজে যেকোন প্রোডাক্ট মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারেন। আপনার প্রোডাক্টটি ভালোমানের হলে মানুষ আপনার প্রোডাক্ট কিনবেই। কারণ দৈনন্দিন জীবনে মানুষের প্রোডাক্ট এর প্রয়োজনীয়তার কোন শেষ নেই।সাধারণত ঘরে বসে প্রোডাক্ট বিক্রি করে আয় করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রোডাক্ট এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। কারণ এগুলো নষ্ট হওয়ার কোন ঝুকি থাকে না। আরো বড় সুবিধা হচ্ছে বিক্রি করার না গেলে সেগুলো কোম্পানির কাছে ফেরত দেওয়া যায়। অনলাইনে সার্চ করলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, বর্তমানে কি ধরনের প্রোডাক্টগুলো অনলাইন মার্কেটে বেশি সেল হয়। শুধুমাত্র ইন্টারনেট রিসার্চ করে আপনাকে একটু বুদ্ধি খাটাতে হবে।
- আরো পড়ুন - এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার উপায়
- আরো পড়ুন - ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়?
আপনার যদি কোন নিজেস্ব প্রোডাক্ট না থাকে, সে ক্ষেত্রে অন্যের প্রোডাক্ট সেল করে সেখাল থেকে কমিশনের মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের এফিলিয়েট মার্কেট আছে যেগুলোতে আপনার একাউন্ট তৈরি প্রোডাক্ট সেল করার মাধ্যমে কমিশন নিয়ে টাকা আয় করতে পারেন।
১২। ছোটখাটো ব্যবসা
আগামীর উদ্যোক্তা হতে চাইলে ছাত্রজীবন থেকে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করতে পারেন। বাসায় বসে স্বল্প পুঁজিতে যেসব ব্যবসা করা যায়, সেসব নিয়ে কাজ করতে পারেন। যেমন- টিশার্টের ডিজাইনিং ও বিক্রি, ইলেকট্রনিকস পণ্য মেরামত করে বিক্রি, অ্যাকুরিয়াম বানানো, বই বাঁধানো, এমনকি ছোটখাটো খামারও করতে পারেন। গ্রামের ছাত্ররা ছোট পরিসরে মুরগির ফার্ম ও মৎস খামার করতে পারেন।শহরে অনেক ধরনের ব্যবসা করার সুযোগ রয়েছে। আপনি যেহেতু একজন ছাত্র সেহেতু বড় কোন ব্যবসা না করে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করতে পারেন। শহরের ফুটপাতে বিভিন্ন ধরনের ছোট খাটো চায়ের স্টল করতে পারেন। এতে লজ্জার কিছু নেই। বেচে থাকার তাগিদে চুরি ডাকাতি সহ মানুষ খুন করছে, কিন্তু আপনি সে ধরনের কিছু করছেন না, তাহলে আপনার লজ্জা হবে কেন? ইতিহাস স্বাক্ষী দিচ্ছে, পৃথিবীর সকল সফল ব্যবসায়িরা ছোট থেকে কালক্রমে বড় হয়েছেন।
No comments