চলুন জেনে নেওয়া যাক গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এ বাংলাদেশের রেকর্ডগুলোঃ
এই বিস্ময়কর রেকর্ড পুস্তক প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ খ্রিঃ ২৭ আগস্ট। এই রেকর্ড ইতিহাসের সূত্রপাত হয়েছিল খুবই চমকপ্রদভাবে।
১৯৫১ খ্রি: ১০ নভেম্বর সার হিউজ বিভার আয়ারল্যান্ডের এক অঞ্চলে শিকার করতে গিয়ে গোল্ডেন প্লেভার নামে একটি পাখি শিকার করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করলেন। কিন্তু এই পাখি কোথাও পেলেন না। ফিরে এসে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে যখন এই পাখির বিষয়ে আলোচনা করছিলেন তখন তর্ক বেধে গেল- গোল্ডেন প্লেভার ইউরোপের সবচেয়ে দ্রুতগামী পাখি কিনা— এই প্রসঙ্গ নিয়ে। কিন্তু এই জিজ্ঞাসার যথাযথ উত্তর পাওয়া না গেলে তর্কেরও মীমাংসা হওয়া সম্ভব না। হলোও না।
পরের ঘটনা ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে। এবারের বিতর্কের বিষয় হলো: গ্রাউস পাখি গোল্ডেন প্লোভারের চেয়ে দ্রুতগামী কিনা। কিন্তু এবারেও বিতর্কের কোন মীমাংসা হলো না। কেননা সঠিক উত্তরটি পাবার মতো কোন বই কারুর সন্ধানেই ছিল না। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্যার হিউজ অনুভব করলেন এমন একটি বই থাকা দরকার যেখানে সমস্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে। এভাবেই সূত্রপাত হলো গিনেস বুক অব রেকর্ডস-এর পরিকল্পনার। সেই বছরেই ১২ সেপ্টেম্বর স্যার হিউজ নরিস আর হুটিয়ানকে আমন্ত্রণ করেন এই ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য। নরিস আর হুটিয়ান সেই সময় একটি এজেন্সি চালাতেন যেখানে নানারকম তথ্য সংগ্রহ করা হতো। এই দু’জনের সাহায্য স্যার হিউজের খুবই কাজে লাগলো। তাদের সহায়তায় একটা দফতর খোলা হলো এবং প্রথম গিনেস বুক-এর কার্যক্রম শুরু হলো।
১৯৫৫ খ্রিঃ ২৭ আগস্ট ১৯৮ পৃষ্ঠায় গিনেস বুক প্রকাশিত হয়। বড়দিনের আগে সেই বছর এই বইটির বিক্রি ছিলো সবচেয়ে বেশি।
১৯৫৬ সালে আমেরিকার গিনেস বুক-এর প্রথম সংস্করণ ছাপা হলো। এর পরে ৩৫টি ভাষায় এই বইয়ের ২৬২টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছ। হিন্দি ভাষায় প্রকাশিত ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর ২০০ এর বেশি ভারতীয় রেকর্ডের আলাদা একটি খণ্ডও প্রকাশিত হয়েছে।
(গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৫১ সালের ১০ নভেম্বর।)
গিনেস বিশ্ব রেকর্ড বইটি নিজেই বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের রেকর্ডের অধিকারী। এ ছাড়া বইটি যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরিগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি চুরি যাওয়া বইগুলোর মধ্যে অন্যতম।
সেই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্যদের মতো নাম লিখিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষরাও।
আজকের এই পোস্ট টিতে আমরা কথা বলবো এমনি কিছু বাংলাদেশের রেকর্ড সমুহ নিয়ে যা গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এ স্থান পাই।
হাত ধোয়ার রেকর্ড:
২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসে একসঙ্গে হাত ধুয়ে পরিষ্কার করেছিলেন ৫২ হাজার ৯৭০ জন মানুষ। ইউনিসেফ, লাইফবয়, ব্র্যাকসহ সহযোগী সংস্থার উদ্যোগে এ আয়োজনেই একসঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের হাত ধোয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়া হয়েছে।
সবচেয়ে ঝাল মরিচ:
মরিচের নাম ভুত জলোকিয়া! অন্য নাম নাগা মরিচ। জন্মস্থান বাংলাদেশ, এবং ভারতের আসাম, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ড। এটি অবশ্য বর্তমানে তার রেকর্ডটি হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ত্রিনিদাদ স্করপিয়ন “বুচ টি” মরিচের কাছে। এর আগে নাগা মরিচই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচ।
সবচেয়ে পাতলা জাতি:
আমাদের দেশের পুরুষের গড় ওজন প্রতি মিটার স্কয়ারে ২০.৫ কেজি। আর নারীদের ক্ষেত্রে এটি ২০ দশমিক ৪ কেজি। বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) সূচকের এই হিসাব অনুযায়ী, আমরাই বিশ্বের সবচেয়ে কম ওজনের জাতি। আর বিশ্বের সবচেয়ে মোটা জাতি হলো দ্বীপদেশ নাউরুর জনগণ।
এক পরিবারের ভাইদের সঙ্গে আরেক পরিবারের বোনদের বিয়ে :
নরেন্দ্র নাথ ও তারামণি নাথের পাঁচ মেয়েকে বিয়ে করেছেন তারাপদ কর্মকার ও রাধা রানী রায়ের পাঁচ ছেলে। তাদের এই বিয়ের সংখ্যা এক পরিবারের ভাইদের সঙ্গে আরেক পরিবারের বোনদের বিয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বরেকর্ড।
সর্বাধিক ঘনত্বের দেশ:
আমাদের দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে দুই হাজার ৯১৮ জন মানুষ। বিশ্বের কোথাও প্রতি বর্গকিলোমিটারে এত বেশি মানুষ বাস করে না।
এক দিনের ক্রিকেটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা:
আমাদের দেশে আমাদেরই বিপক্ষে ১৫টি ছক্কা মেরে এক দিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ড গড়েছেন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার শেন ওয়াটসন।
সবচেয়ে বড় শিলা:
১৯৮৭ সালে গোপালগঞ্জে এক ভয়ঙ্কর শিলাবৃষ্টি আঘাত হানে, যেখানে সবচেয়ে বড় শিলাটি ছিল এক কেজি ওজনের। বিশ্বের কোথাও এত ওজনের শিলাপাত হয়নি। সেই বৃষ্টিতে প্রাণ হারিয়েছিল ৯২ জন মানুষ।
সবচেয়ে বড় মানবশিকল:
২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত এক হাজার ৫০ কিলোমিটার এলাকা হাতে হাত রেখে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবশিকলের আয়োজন করেছিলো।
সবচেয়ে বড় উপসাগর:
বঙ্গোপসাগরের আয়তন ২১ লাখ ৭২ হাজার বর্গকিলোমিটার। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় উপসাগর।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাট:
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাটটি ১১১ ফুট লম্বা এবং এটি প্রস্থে সাড়ে ১২ ফুট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহনেওয়াজ হলের ৬৭ জন ছাত্র বিশ্বকাপ উপলক্ষে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ব্যাটটি বানাতে সময় নিয়েছেন মাত্র ১৫ দিন।
সুপার গ্র্যান্ড ফাদার:
বগুড়ার মোহাম্মদ রজব আলীর নাম গিনেস বুকে সুপার গ্র্যান্ড ফাদার। ১১৫ বছর বয়সে মারা যাওয়া রজব আলীর নাতি-নাতনির সংখ্যা পাঁচ শরও বেশি।
টেবিল টেনিসে বিশ্বরেকর্ড:
আমাদের দেশের জোবেরা রহমান লিনু জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে ১৬ বার জিতে সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নাম লিখিয়েছেন গিনেস বুকে।
সবচেয়ে বড় স্ট্যাপলার পিনেরচেইন:
খন্দকার শিহাব আহমেদ নামের এক ছাত্র বানিয়েছেন হাতে বানানো বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্ট্যাপলার পিনের চেইন।
এটি ৪২২ ফুট ৪ ইঞ্চি লম্বা এবং এখানে ব্যবহার করা পিনের সংখ্যা ২৭ হাজার। মজার ব্যাপার হলো, এটি বানাতে শিহাবের খরচ হয়েছে মাত্র ২৭০ টাকা।
No comments